বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতি, চট্টগ্রাম

বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতি, চট্টগ্রাম

৩১/৪০ নন্দনকানন, চট্টগ্রাম / মোবাইল- ০৩১২৮৫৩৩০৯, ০১৭৬৪৭৪৮২৩২

ময়মনসিংহ বিভাগ

শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের সূতিকাগার বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা ১৭৮৭ সালের ১মে জেলা হিসেবে জন্মের পর বর্তমান ময়মনসিংহের আদল পায় ১৯৮৪ সালে।পরবর্তীতে ২০১৫ সালে ময়মনসিংহ বিভাগের জন্ম হয়। উত্তরে গারো পাহাড় ও ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে গাজীপুর জেলা, পূর্বে নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে শেরপুর, জামালপুর ও টাঙ্গাইল জেলা বেষ্টিত ময়মনসিংহ জেলার ভৌগোলিক পরিবেশ বিচিত্র হওয়ায় বলা হয়-‘‘হাওর, জঙ্গল, মইষের শিং-এ নিয়ে ময়মনসিং”। ৪,৭৮৭ বর্গমাইলের রত্নগর্ভা এ জেলার প্রাণবন্ত মানুষের পরিচয় পাওয়া যায় এর নামের মাঝেই- My-men-sing অর্থাৎ আমার লোকেরা গান গায়। মহুয়া-মলুয়ার দেশ ময়মনসিংহের পূর্ব নাম ছিল নাসিরাবাদ। মোঘল আমলে মোমেনশাহ নামে একজন সাধকের নামে অঞ্চলটির নাম হয় মোমেনশাহী- কালের বিবর্তনে যা ময়মনসিংহ নামে পরিচিতি লাভ করে। ময়মনসিংহ শহরের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। এ নদের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েই শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন বহু ছবি এঁকেছিলেন। এখানকার বহু স্থাপনায় প্রাচীন নির্মাণ শৈলীর ছোঁয়া রয়েছে। আছে কালের সাক্ষী স্বরূপ ভগ্ন জমিদার বাড়ী। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিও জড়িয়ে আছে এ জেলার ত্রিশাল উপজেলার সাথে। সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ আর বৈচিত্র্যপূর্ণ জনগোষ্ঠির এক জনপদ এ ময়মনসিংহ বিভাগ।

পুরাকীর্তির সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ

মাথা ভাঙ্গা মঠঃময়মনসিংহ সদরের অন্যতম প্রাচীন স্থাপনা কোতুয়ালী থানার পাশের শিব মন্দিরটি। থানা ঘাটের এই মন্দিরটি ‘মাথাভাঙ্গা মঠ’ নামেও পরিচিত। এর চূড়া ১৮৮৫ ও ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ভেঙ্গে যাবার কারণে এটি মাথা ভাঙ্গা মঠ নামে পরিচিতি লাভ করে। এটিকে অষ্টাদশ শতকের স্থাপত্য বলে কেউ কেউ ধারণা করলেও এর নির্মাণ কালের তথ্য জানা যায়নি।

ব্রাহ্ম উপাসনালয়ঃ১৮৫৪-এর পর গাঙ্গিনার পাড়ে স্থাপিত হয় ব্রাহ্মদের উপাসনালয়। পরে সেখানে স্থাপিত হয় ময়মনসিংহ ল’ কলেজ। বর্তমানে মূল স্থাপনাটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।

শশীলজঃমুক্তাগাছার জমিদার মহারাজা সূর্যকান্তের বসতবাড়ি শশীলজ। নিজ পুত্র (ভাতিজা ও দত্তকপুত্র) শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর নামে ঊণবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এটি নির্মিত হয়। বাড়িটি ছিল দ্বিতল ভবন। ১৮৯৭-এর ভূমিকম্পে দ্বিতল ভবনটি ভেঙ্গে যাবার পর বর্তমান বাড়িটি পুননির্মাণ করা হয়। দ্বিতল ভবনের সিঁড়িতে বিশেষ বাদ্যের ব্যবস্থা ছিল। সিঁড়িতে মানুষ চলাচল করলেই সুমধুর বাজনা বাজতো। জানা যায়, প্যারিস থেকে মহারাজা এক লক্ষ (মতান্তরে তিন লক্ষ) টাকা ব্যয়ে স্ফটিক সঙ্গীত বাক্সটি কিনে এনেছিলেন। দ্বিতল শশীলজ ধ্বসে যাবার পর মহারাজা তার এলাকায় দ্বিতল পাকা বাড়ি নির্মাণ নিষিদ্ধ করেন। বিশাল এ বাড়িটিতে আছে অসংখ্য দুর্লভ প্রাচীন বৃক্ষ। বর্তমানে শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয় (মহিলা) হিসেবে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি ময়মনসিংহ শহরে অবস্থিত।

আলেকজান্ডার ক্যাসেলঃময়মনসিংহ শহরের এক উল্লেখযোগ্য স্থাপনা আরেকজান্ডার ক্যাসেল বা আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল। মুক্তাগাছার জমিদার মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী ময়মনসিংহ শহরের জুবলী উৎসব পালনের জন্য তৎকালীন ভারত সম্রাট সপ্তম এডওয়ার্ড-পত্নী সম্রাঞ্জী আলেকজান্দ্রার নামে এই দ্বিতল ভবনটি নির্মাণ করেন। অন্য মতে, ময়মনসিংহের তৎকালীন ইংরেজ কালেক্টর আলেকজান্ডার আই, সি, এস, -এর নামে ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে ভবনটি নির্মাণ করা হয়। এটি মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর বাগানবাড়ি হিসেবে খ্যাত। বর্তমানে এটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয় (পুরুষ)-এর লাইব্রেরী হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। হাসান মঞ্জিলঃধনবাড়ির জমিদারদের সুদৃশ্য ভবন। রাজ রাজেশ্বরী ওয়াটার ওয়ার্কস- এর পেছনে এ বাড়িতে একসময় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের জেলা অফিস ছিল। বর্তমানে ব্যবহার অনুপোযোগী বলে পরিত্যক্ত। ধলার জমিদারদের বাড়িঃহাসান মঞ্জিলের বিপরীতে একই রাস্তায় অবস্থিত। বর্তমানে সরকারী কর্মচারীদের বাসস্থান হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা: শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালাটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওত্তাধীণ বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের একটি শাখা।সংগ্রহশালাটি ময়মনসিংহ জেলাধীন সদর উপজেলার কাশর মৌজাস্থ সাহেব কোয়ার্টার এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদ তীরবর্তী অত্যমত্ম নৈসর্গিক ও মনোমুগ্ধকর পরিবেশে ০৩.১৯৫ একর জমির উপর অবস্থিত। সাধারণের শিল্প ভাবনাকে উৎসাহিত করতে এবং চিত্রকলার আন্দোলনকে বিকেন্দ্রীকরণ অর্থ্যাৎ ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে দেবার লক্ষে জয়নুলের শৈশবের স্মৃতিঘেরা শহর ময়মনসিংহে শিল্পাচার্যসহ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ত্ব ,গুণীজন, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এবং ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন সম্মিলিতভাবে সংগ্রহশালাটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণের ধারাবাহিকতায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের তৎকালীন মহামান্য উপ-রাষ্ট্রপতি জনাব সৈয়দ নজরম্নল ইসলাম ০১ বৈশাখ ১৩৮২ বঙ্গাব্দ (১৫ এপ্রিল ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ) শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালার শুভ উদ্বোধন করেন। ৩১-০৮-১৯৯৯খ্রি. থেকে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের একটি শাখা হিসাবে সংগ্রহশালাটি পরিচালিত হচ্ছে। সংগ্রহশালায় মোট ০৩টি গ্যালারিতে জয়নুলের শিল্পকর্ম, ব্যক্তিগত স্মৃতি নিদর্শন ও স্থির আলোকচিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। মূল ভবনের দ্বিতীয় তলায় গ্যালারিগুলো অবস্থিত। বিভিন্ন মাধ্যমে কাগজ, বোর্ড ও ক্যানভাসে আঁকা শিল্পাচার্যের ৬১টি মূল শিল্পকর্ম ও ০১টি শিল্পকর্মের ডিজিটাল অনুকৃতিসহ মোট ৬২টি শিল্পকর্ম, শিল্পাচার্যের ব্যবহৃত ৮২টি নিদর্শন, শিল্পাচার্যের ৫৩টি স্থির আলোকচিত্র, ০৪টি বোর্ডে জয়নুলের সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তামত্ম, ০১টি সংগ্রহশালার কি-লেবেল এবং জয়নুলের ০১টি পোট্রেইট প্রদর্শিত হচ্ছে। শিল্পাচার্যের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি: শিল্প সংস্কৃতির পরিমন্ডলে বাংলাদেশ তথা আমত্মর্জাতিক অঙ্গনে সমকালীন শিল্পকলার একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র, প্রকৃতি ও মানবতাবাদের শিল্পী, বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পধারার প্রথম প্রতিষ্ঠাতা প্রাণপুরম্নষ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। তিনি বাংলাদেশের শিল্পচর্চা ও শিল্পকলা আন্দোলনের পথিকৃৎ। তিনি তাঁর সৃজনশীল প্রতিভার মাধ্যমে বাংলাদেশের সমকালীন শিল্পকলাকে আমত্মর্জাতিক ক্ষেত্রে এক সস্মানজনক আসনে অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৯ ডিসেম্বর বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার অমত্মর্গত বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলার একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৮ মে ৬২ বছর বয়সে ঢাকার তৎকালীন পোস্ট গ্রাজুয়েট হাসপাতাল,শাহবাগে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁরই প্রতিষ্ঠিত চারম্নকলা ইন্সটিটিউটের পাশে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দী্রয় মসজিদ প্রাঙ্গণে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। মহান শিল্পীর শৈশব কৈশোরের স্মৃতি বিজড়িত ব্রহ্মপুত্র নদ তীরবর্তী নৈসর্গিক দৃশ্য পরিবেষ্টিত শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা। শিল্পী তাঁর জীবদ্দশায় এ স্থানটিতে প্রায়ই আসতেন এবং ছবি আঁকতেন।